রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন ডেক্সঃ
ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের খবরে দাম কমেছে আশায় বরিশালের মাছ বাজারে অনেক ক্রেতা ভিড় করছেন।
কিন্তু তাদের মন খারাপ করে ফিরতে হচ্ছে। দামতো কমেইনি বরং গত মৌসুমের তুলনায় মণপ্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পাইকাররা বলছেন, ইলিশ ধরা পড়ছে কম। তাই দাম কমা তো দূরে থাক, বেড়েছে অনেক।
পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ কিনতে আসা এক গৃহিণী বলেন, ‘ইলিশের দাম আমাদের সাধ্যের বাইরে।
যে টাকা নিয়ে এসেছি, তার থেকে ইলিশের দাম অনেক বেশি। এসেছি ইলিশ কিনতে, কিন্তু কিনতে হচ্ছে অন্য মাছ।’
ব্যবসায়ী আলম মিয়া বলেন, ইলিশ কেনার টার্গেট নিয়ে এসেছি, কিন্তু রুই মাছ কিনে ফিরছি। আমরা আশা করছি ইলিশের দাম কমবে
স্কুল শিক্ষক কালাম বলেন, ‘যে মাছ ১২শ টাকায় কিনেছি, সেই মাছ ১৮শ টাকার নিচে দিবেই না। আমরা তো ভেবেছি ভারতে ইলিশ যাচ্ছেই না, দাম কমে গেছে। বাসা থেকে আসছি আশা নিয়ে, তবে বাজেট নেই তাই, একটা ইলিশই কিনতে হয়েছে।’
বরিশালের পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭শ থেকে ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশের বর্তমানে মণপ্রতি ৫৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, এক কেজি ওজনের মাছ মণ ৬৪ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা, ১১শ গ্রামের উপরের ওজনের ইলিশ ৬৮ হাজার টাকা, ৫শ থেকে ৬শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫৪ হাজার টাকা এবং জাটকা ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২ হাজার টাকা দরে।
তবে গত মৌসুমে এই ৭শ থেকে ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশের বাজার দর ছিল মণ প্রতি ৫৫ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের মাছ ৬০ হাজার টাকা, ১১শ গ্রামের উপরের ওজনের ইলিশ ৬৩ হাজার টাকা, ৫শ থেকে ৬শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫০ হাজার টাকা এবং জাটকা ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার টাকা দরে।
পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার এসোসিয়েশনের সদস্য ইয়ার হোসেন রব বলেন, ‘সাগরেও ইলিশ নেই, নদীতেও ইলিশ নেই। এখন যে পরিস্থিতি তাতে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে, এই ব্যবসা করে স্টাফ চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
’একটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়, কিন্তু ট্রলার ফাঁকা আসছে, ইলিশ নেই। ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা, বাইরে লোকালে ঋণ আছে, এখন ইলিশ ধরা না পরলে আমাদের পালাতে হবে। ৩ থেকে ৪ বার ট্রলার ফেরত এসেছে মাছ ছাড়া। এমন অবস্থায় ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
বরিশালের পোর্ট রোডে স্বাভাবিক মৌসুমে ইলিশ নিয়ে ১৫ থেকে ২০টি ট্রলার ভিড় করত। সেখানে এখন আসছে সর্বোচ্চ ৫টি ট্রলার। সব মিলিয়ে আসছে ৬০ মণের মত ইলিশ। এই কারণে দাম অনেকটা বেশি। চাহিদা অনেক থাকলেও সরবরাহ নেই।
ইয়ার হোসেন বলেন, ‘২৩ জুলাই ইলিশ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এরপর প্রায় একমাস হতে চললেও জেলেরা নদী-সমুদ্রে আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছে না। তাই আড়তেও মাছ আসছে না। পানি দূষণ, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদীর মাছ আসছে না। তারপরও আমরা আশা করছি বৃষ্টি আরো বাড়লে মাছ বাড়তে পারে। মাছ না পাওয়া গেলে জেলেরা যেমন ঋণী হবেন তেমনি আমরাও লোকসান গুনবো।’
ইয়াছিন আরাফাত ফিশিং নামের আড়তের মালিক রেজাউল করিম ফোরকান বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার পর এমন ইলিশ সংকট বরিশালে কখনোই হয়নি। ভারতে রপ্তানি বন্ধ হয়েছে তাতে আমাদের বাজারে কোনো প্রভাবই নেই। কারণ ইলিশ আমাদের নদী সাগরে নেই। আমরাই পাচ্ছি না ইলিশ, এর মধ্যে রপ্তানি বন্ধ হয়েছে বা না হয়েছে সেটা ভাবার বিষয় নেই। আমরা এখন পুরোপুরি লোকসানের মুখে।‘